খাদিজা বেগম তার দিনমজুর এবং সম্পদহীন পিতামাতার একমাত্র কন্যা। সে তার বাবা-মার তৈরি মাটির ঘরে বড় হয়েছে। মাত্র ১১ বছর বয়সে একজন বেকার ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়। আর বিবাহিত জীবন বোঝার আগেই তিনি দুসন্তানের জননী হন। জীবনের এ সময় এসে তিনি বুঝতে পারলেন তিনি তার স্বামী এবং দুসন্তান তার বাবা-মার সংসারে বোঝা স্বরূপ ঠিক এই সময় তিনি “নিজধারা মহিলা সমবায় সমিতি” নামে একটি সমবায় সমিতির নাম শুনলেন যেটি ছিল ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে' (B.R) এর অধীন। পরে তিনি এ সমবায় সমিতির সদস্য হলেন। প্রথমে তিনি সমবায় সমিতি হতে ১০০০ টাকা ঋণ নিলেন এবং ঋণের ব্যবসা শুরু করলেন। ঋণ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে যে মুনাফা হলো তা দিয়ে তিনি তার দৈনন্দিন খরচ মিটানোর পাশাপাশি ঋণের ১ম কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। তারপর হতে উদ্দীপনার মাধ্যমে তার সংসার পরিচালনা করছেন। এভাবে তিনি ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোট ৬৮০০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী লালন-পালন করেন। তিনি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী ক্রয় করে একটি ডেইরি ফার্ম এবং একটি পোলট্রি ফার্ম স্থাপন করেন। বর্তমানে তার খামারে আটটি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ২টি বিদেশি গাভী এবং ৬টি মাঝারি সাইজের গাভী রয়েছে। বর্তমানে সে গাভী হতে প্রতিদিন ৩০ লিটার দুধ পায় যার বর্তমান বাজারমূল্য ৭৫০ টাকা। এ দিয়ে তিনি খামারের সব খরচ এবং তাদের দৈনন্দিন খরচ মিটানোর পর ৩০০ টাকা সঞ্চয় করেন। তিনি একটি পোলট্রি ফার্ম গড়ে তুলেছেন যেখানে ২০টি হাঁস এবং ৩২৫ টি মুরগি লালন পালন করেন। পোলট্রি ফার্ম হতে তিনি দৈনন্দিন চাহিদা মিটানোর পর অবশিষ্ট ডিম বাজারে বিক্রি করেন। তার মোট দৈনন্দিন জমা টাকা দিয়ে স্থানীয় ‘ধরা’ বাজারের নিকটে ২৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩,০০,০০০ (তিন লাখ) টাকা। ‘ধরা’ বাজারে তিনি একটি কীটনাশক ঔষুধের দোকার দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি তার বাড়িতে একটি আধা পাকা ঘর দিয়েছেন। তার স্বামী বর্তমানে ট্রাক চালান । তার নিজের এবং তার স্বামীর আয়ে বর্তমানে তার সংসার খুব ভালোভাবে চলছে। এখন তিনি অনেক স্বচ্ছল। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছে। তার বৃদ্ধ বাবা-মার ও দেখাশুনা করছেন। বর্তমানে তিনি তার সমাজে এবং গ্রামে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি অন্য মহিলাদের জন্য অনুকরণীয়। বর্তমানে তিনি খুবই সুখী এবং এজন্য তিনি সমবায় সমিতির প্রতি কৃতজ্ঞ ।
Read more